মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ এ ৯:০৫:৫২ AM
লেখক: ইমরান উদ্দিন
প্রিয়, কেমন আছো? নিশ্চয়ই ভালো আছো। এর আগের চিঠি পেয়েছিলে কিনা জানালে না। কোনো খোঁজও রাখোনি। আজকাল মনে হয়, তুমিও আমার মতো হয়ে যাচ্ছ। নাকি ভুলে গেছ! জানো? অনার্সের দীর্ঘ সফর শেষ করেছি। যদিও চার বছরের অনার্স পাঁচ বছরে শেষ করেছি। যাই হোক, শেষ করতে পেরেছি এটাই শুকরিয়া। গতকাল রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। অথচ কেমন যেন অদ্ভুত এক মুহূর্তের সামনে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। জানো— পঞ্চম, অষ্টম, দাখিল, আলিম, এডমিশনের রেজাল্ট পেয়ে যে মানুষগুলো খুশিতে আত্মহারা হয়ে মিষ্টি বিতরণ করত, ঠিক গতকালও একই কাজ করেছি। দেখলাম— শুধুমাত্র একজন ছাড়া কেউ রিপ্লাইও করেনি। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম, তারা হয়তো অন্তত "আলহামদুলিল্লাহ" উচ্চারণ করবে। তারা আগে জিপিএ-৫ দেখত নিয়মিত। এখন সিজিপিএ দেখে হয়তো অন্য কিছু ভেবে বসে আছে কিনা সেটাও জানি না। তবে আমার কাছে অদ্ভুত লাগল ব্যাপারটা... আগে রেজাল্টের দিন আম্মা বেশ এক্সাইটেড থাকত। দোয়া করত। নামাজে দাঁড়াত। অনার্সে শুধু পরীক্ষার সময় বলতাম, "আজকে পরীক্ষা আছে, দোয়া করিও।" রেজাল্ট না বলাতে আম্মা একবার বলেছিল, "তোদের বিশ্ববিদ্যালয়ে খালি পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট হয় না!" আমি বলেছিলাম, "হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রেজাল্ট একেবারে শেষে দিবে।" আচ্ছা ওইসব বিষয় বাদ দিই। জানো? কালকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। ঠিক ২০১৯ সালে আমিও এসেছিলাম। মজার বিষয় হচ্ছে, আমার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় সফর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দেখিওনি। যাইওনি। এসেছিলাম মুহসিন হলে আকিল ভাইয়ের রুমে। আবদুল খালেক ভাই সন্ধ্যার সময় বলল, "চলো, বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে ঘুরে দেখি।" আমিও ওনার সাথে হেঁটে হেঁটে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখেছি। এর আগে কোনোদিন বিশ্ববিদ্যালয় না দেখার কারণে এটার মায়ায় এত বেশি পড়েছিলাম যে, নামাজে সবসময় দোয়া করতাম, চান্সটা যেন এখানে পাই। রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলাম সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের টিন শেডের ওখানে একটা রুমে। আমার মাদ্রাসার সিনিয়র আবু সিদ্দিক ভাইয়ের রুমে ছিলাম। আমার পরীক্ষার হল ছিল ঢাকা কলেজে। ভাইকে বললাম, "এটা কোথায়?" ভাই বলল, "এদিকে রাস্তায় উঠে রিকশা অথবা সিএনজিকে বললে তোমাকে নামিয়ে দেবে।" আমি বের হয়ে এফ আর হলের অপজিটের শিক্ষক কোয়ার্টারের সামনে দাঁড়িয়ে রিকশা দেখলাম কয়েকটা, কিন্তু কেউ যাচ্ছে না। কারণ খুব কাছে, তাই। একজন পেলাম। তাকে বললাম, "কত?" সে বলল, "১০০ টাকা।" আমি কিছু না ভেবে উঠে গেলাম। ভাবলাম, হয়তো দূরে হবে। সে আমাকে সিগনালসহ মোটের উপর ৮ মিনিট গাড়ি চড়াল। দেখলাম আমি ঢাকা কলেজের সামনে চলে এসেছি। টাকা দেওয়ার সময় তার মুখের দিকে আমি চেয়ে আছি, আর সে আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে। বলে, "টাকা দেন।" দেওয়ার পর মুচকি হেসে চলে গেল। ঠিক আজকে পাঁচ বছর পর— একা একা ক্যাম্পাসে হাঁটলাম। ব্যানারে ব্যানারে পুরো ক্যাম্পাস ছেয়ে গেছে। স্মৃতিচারণ করলাম। মনে মনে হাসলাম। ভাবলাম, সেটুকু তোমাকেও শেয়ার করি। তাই উড়ো চিঠি লিখলাম। ইতি, তোমার বোকাসোকা প্রেমিক।
সাহিত্য