শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ এ ১০:৫৩:৫৬ AM
লেখক: নাম:আন্জুমান আরা ঐশী বিভাগ: ইসলামিক স্টাডিজ সেশন:২০২২-২০২৩ মোবাইল নাম্বার:01939333189 ইমেইল: anjumanaraoyshi11@gmail.com
পুষ্পকুসুম মানে কি জানো? একটা ছোট্ট মুখ, যে এখনো “মা” বলতেই শেখেনি, একটা কচি হাত, যেটা খেলনার বদলে ধ্বংসস্তূপের মাটি খোঁজে, একটা শিশুর হাসি, যার ঠোঁট রক্তে রঙিন হয়ে আছে। আমি সেই পুষ্পকুসুম, আমি গাজা থেকে বলছি... আমরা এখন আর নাম নই, আমরা সংখ্যা। আজ ১৩৭তম শিশুটা চলে গেল, কাল গুনে দেখো—১৪০ হয় কি না। তবে সংখ্যা দিয়ে কখনও চোখের পানি মাপা যায় না, মায়ের বুকফাটা কান্নার ওজন হয় না ক্যালকুলেটরে। আমরা খাই না দিনের পর দিন। ক্ষুধার্ত পেটে বোমার শব্দ বাজে, আমার ছোট ভাই পানি খুঁজতে খুঁজতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মা বলে, "সয়ে নে বাবা, আরেকটু কষ্ট কর।" কিন্তু ক্ষুধা কি সময় চেনে? আমার বন্ধু মারওয়ান একদিন খুব খুশি ছিল। সে দৌঁড়াচ্ছিল, হেসেছিল, আর হঠাৎ এক বিকট শব্দ… তারপর সে আর হাসেনি। কিন্তু অবাক কাণ্ড, মৃত্যুর মুখেও তার ঠোঁটে হাসি ছিল। হয়তো সে স্বপ্ন দেখেছিল এমন এক ভোর, যেখানে ড্রোন নেই, যুদ্ধবিমান নেই, শুধু পায়ের নিচে ঘাস আর আকাশজোড়া নীল। মায়েরা আজকাল চুপচাপ থাকে। কারণ কান্নারও এক সীমা আছে। তারা আর জোরে কাঁদে না— শুধু চেয়ে থাকে নির্জন কবরের দিকে, যেখানে শুয়ে আছে ছোট্ট জুতা-পরা স্বপ্নগুলো। আমি এখনো পুষ্পকুসুমই, আমার শরীর ক্ষুদ্র, কিন্তু ব্যথার পরিমাণ বিশাল। আমার চোখে বেঁচে থাকার আকুতি, আর ঠোঁটে—হয়তো শেষ একটা শব্দ: "আম্মু…" তবু আমরা হারি না। আমরা পুড়ি, কিন্তু মাটি ছেড়ে দিই না। আমরা কাঁদি, কিন্তু ঘৃণা করি না। কারণ আমরা গাজার সন্তান। আমরা ফুল হয়ে ঝরে পড়ি, তবু প্রতিবার জেগে উঠি আরেকটি শিশুর মুখে, আরেকটি চোখে, আরেকটি বুকভরা স্বপ্নে। আমি পুষ্পকুসুম… আমি গাজা থেকে বলছি… তোমরা কি শুনতে পাচ্ছো?
সাহিত্য